মানবতার শিল্পী [পর্ব ১] (সময় হয়েছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানবতার শ্লোগান দেওয়ার)
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মোরশেদুল আলম আরিফ ২০ মে, ২০১৮, ০৯:১৫:০৩ রাত
(আসসালামু আলাইকুম।
গল্প আকারে লেখা আমার তেমন ভাল হয় না। চেষ্টা করেছি নিজের সেরাটা দেওয়ার। যদি কোন ভুলত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং শুধরে দিবেন যাতে পরবর্তীতে ভুল না হয়। )
"মনছুর মাষ্টারের চালচলন আমার ভাল ঠেকছে নাহ!"
চায়ের দোকানে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কথাটা বলল রহিম মিয়া। তার কথার সাথে তাল মেলাতে লাগল আব্দুল " হ ভাই! হাছা কইছেন। ইদানীং দেহি মাষ্টার হিন্দু পোলাপাইন কতগুলারে ঘরেতে নি আহে "
রহিম মিয়া লক্ষ্য করল মনছুর মাষ্টার দোকানের দিকে আসতেছেন। কথা আর না বাড়িয়ে দোকানদাররে টাকা দেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল।
আব্দুল মনছুর মাষ্টারকে উদ্দেশ্য করে বললেন "আসসালামু আলাইকুম মাষ্টার সাহেব কেমন আছেন?
ওয়ালাইকুম আসসালাম, আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন? বাড়ির সবাই ভাল আছে?
হ মাষ্টারসাব হক্কলে ভালা আছে। তা কি নিবার লাইজ্ঞা দোকানে আইলেন?
কিছু না কলম শেষ হয়ে গেছে। কলম নেওয়ার জন্য আসলাম।(এই বলে যে যার গন্তব্যে রওনা দিল।)
সন্ধ্যা হয়ে গেল গুড়িগুড়ি বৃষ্টি নামছে। ৪-৫ টা ছেলে মনছুর মাষ্টারের ঘরের দিকে মাথায় কচু পাতা রেখে দৌড়াইতে লাগল। মনছুর মাষ্টার ঘরের সামনের দরজাটা খুলে রেখে একমনা হয়ে বই পড়ছেন।
আদব স্যার। আমরা আসব? মনছুর মাষ্টার মুখ তুলে দেখলেন তার ছাত্ররা এসেছেন। যদিও এটা কোন আকস্মিক ঘটনা না। তারা প্রতিদিন এই সময়ে তাদের মনছুর স্যারের কাছে পড়তে আসেন।মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে মনছুর মাষ্টার বললেন আস। তোমরা দেখি ভিজে গেছ! ছাতা নেই তোমাদের?
স্যার ছাতা লইয়া মা মন্দিরে গেছে। শুকান্ত জবাব দিল।
আচ্ছা এই গামছাটা দিয়ে মাথা মুছে নাও না হলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।
সবাই মাথা মুছে চৌকির উপর লাইন ধরে বসে নিজ নিজ খাতা কলম বই বের করল।
মনছুর মাষ্টার সবাইকে প্রশ্ন করা শুরু করলেন।
পড়া শিখেছে কিনা, বাড়ির কাজ করেছে কিনা। এই প্রশ্নগুলো।
প্রদীপ একটু নিচু গলায় বলল "স্যার আমার অসুখ ছিল তাই শিখতে পারি নাই। "
পড়ালেখার প্রতি এত অবহেলা কেন তোমার! শুকান্তকে দেখ ও নিয়মিত পড়া শিখে আসে। (একটু ধমকের সুরে বলল মনছুর মাষ্টার)
পরের বার পড়া না শিখলে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার হুমকি দিয়ে ছাত্রদের অংক করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল মনছুর মাষ্টার।
সকালের নামাজটা পড়ে ধীরগতিতে হাঁটতে লাগলেন মনছুর মাষ্টার। কি যেন ভাবতে লাগল! দেখে মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীর চিন্তা তিনি একজনে করছেন। হাঁটতে হাঁটতে কখন বাড়ি চলে আসলেন তিনি নিজেও জানেন না। উনার স্ত্রী রাবেয়া খাতুন চা নিয়ে বসে আছে উনার অপেক্ষায়। মাষ্টারসাব নামাজ পড়ে এসে চা খেতে বড্ড ভালবাসে। রাবেয়া খেয়াল করলেন তার স্বামীকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। স্বামীর চিন্তিত চেহারা দেখে প্রশ্ন করতে ভয় পেলেন। উল্টাপাল্টা প্রশ্ন শুনলে ঝাড়ি দেওয়ার অভ্যাস আছে। শিক্ষক মানুষ মাঝে মাঝে লেখালেখিও করে তাই বুঝি হয়তো এত চিন্তা করছেন। মনে মনে এই চিন্তাটি করে নিজেকে সান্ত্বনা দিলেন রাবেয়া খাতুন।
" চায়ে চিনি একটু বেশী " গম্ভীর গলায় স্ত্রীকে বললেন মনছুর মাষ্টার।
প্রতিদিনের মত ঠিক সময়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন মাষ্টার। প্রধানশিক্ষক রণজিৎ রায় মনছুর মাষ্টারকে দেখার সাথে সাথে ডাক দিলেন। সামনে আসতে রণজিৎ রায় বলে বসলেন " কি ব্যাপার আপনাকে এত চিন্তিত মনে হচ্ছে কেন? "
"তেমন কিছু না। " এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন মনছুর মাষ্টার।
তবে রণজিৎ রায় ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না। উনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন। মনছুর মাষ্টার আর রণজিৎ রায় খুব ঘনিষ্ঠ। সবসময় একে অপরের খেয়াল রাখেন।
মনছুর মাষ্টার শেষ পর্যন্ত বলেই ফেললেন " আসলে ব্যাপারটা হল সমাজের কিছু মানুষজনকে নিয়ে। তারা ভিন্ন ধর্মীদের সহ্য করতে পারে না।আমি প্রায়শই লক্ষ্য করি তারা আমাকে নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা করে। এই যেমন আমি কেন হিন্দু ছাত্র ছাত্রীদের নিজের ঘরে নিয়ে এসে কেন পড়াই!এইসব। খুব চিন্তার মধ্যে আছি। "
রণজিৎ রায় একটু চিন্তা ভাবনা করে বললেন, "ক্লাসের পর কথা হবে।
।"এই বলে যে যার ক্লাসের উদ্দেশ্যে চলে গেলেন।
ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ সংঘাতের শেষ নেই এই পৃথিবীতে। যেখানে মানবতা, ভালবাসায় হচ্ছে সব সুখের মূল সেখানে কেন এই যুদ্ধ! কেন এই সংঘাত! কেন এই বৈষম্য! স্রষ্টা কি একাধিক ? যার ক্ষমতা বিস্তার করার জন্য আমরা একে অন্যকে হত্যা করছি! স্রষ্টা যদি একাধিক হয় তাহলে আমরা সবাই রক্ত মাংসে তৈরি কেন! এক ধর্মের মানুষ রক্ত মাংসে গঠিত হলে অন্য ধর্মের মানুষ লোহা দিয়ে তৈরি হওয়া উচিত ছিল। যাক এসব কথা।
মনছুর মাষ্টার ক্লাস শেষ করে রণজিৎ রায়ের অফিসকক্ষে বসে আছেন।
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার উপক্রম রণজিৎ রায়ের সাথে এখনো দেখা হয়নি মনছুর মাষ্টারের। মনছুর মাষ্টার যখন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন ঠিক তখন পেছন থেকে রণজিৎ মাষ্টার ডাক দিলেন।
"চলুন, আজ আপনার বাসায় যাব। ভাবির হাতের চা খেয়ে আসব।" মনছুর মাষ্টারের কাঁধে হাত রেখে বলল রণজিৎ মাষ্টার।
" চলেন, যাওয়া যাক।"
এই বলে দুজন একতালে হাঁটতে লাগল।
"সব গাছের নাম আছে এই যেমন আম গাছ, কাঁঠাল গাছ। কিন্তু যখন শুধু "গাছ" বলে সম্বোধন করা হয় তখন সব গাছকে এক সারিতে নিয়ে আসে। " রণজিৎ রায় আকস্মিক কথাটি বলে ফেললেন।
মনছুর মাষ্টার বুঝে উঠতে পারলেন না।তাই প্রশ্ন করে বসলেন " ঠিক বুঝলাম না দাদা! " (রণজিৎ রায় মনছুর মাষ্টারের বয়সে বড় এবং পদবীতেও। তাই দাদা বলে ডেকে থাকেন।)
"ভূমি থেকে উদদত দীর্ঘ কান্ডবিশিষ্ট(অধিকাংশ ক্ষেত্রে শাখাবিশিষ্ট) জীবসত্তা যা মূলের সাহায্যে খাদ্যগ্রহণ করে এবং সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নিয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে তাদের কথা বলছিলাম। "
এমন একটা উত্তর শুনে মনছুর মাষ্টারের হাঁটার গতি একটু কমে গেল।
কি বুঝাতে চান একটু ক্লিয়ার করে বলুন।
রণজিৎ রায় বলতে লাগল " প্রতিটি গাছের ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে অথচ তাদের কাজ অনেকটা একরকম বললে চলে এই যেমন মনে করুন আম গাছের কাজ হল আম উৎপাদন করা ঠিক তেমনি কাঁঠাল গাছের কাজ হল কাঁঠাল উৎপাদন করা। যা আমরা গ্রহণ করে থাকি। আর তাছাড়া মানবজাতিকে অক্সিজেন সরবরাহ করা এবং কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করি। "
এসব জানি। ঠিক কি বুঝাতে চান একটু খুলে বলুন।
" বলতেছি ভাই। তারা আলাদা আলাদা গাছের নাম বহন করলেও তাদের কাজ কিন্তু একি। হয়তো তারা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে কে কতটা ভাল সার্ভিস দিতে পারে এই প্রকৃতিকে। আপনি গাছের জায়গাতে মানুষকে রাখুন। ভাবুন আমাদের কাজ কি আর আমরা কি করছি! আমরা আলাদা আলাদা ধর্মে জন্মগ্রহণ করেছি, আমাদের জাত,বর্ণ আলাদা কিন্তু আমরা মানুষ। ভিন্ন ভিন্ন নামে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মে আমাদের জন্ম। "
কথা শেষ করতে পারল না রণজিৎ রায়। তার আগেই মনছুর মাষ্টারের বাড়িতে পৌঁছে গেলেন। বাড়ি আসতে রাবেয়া খাতুনকে উদ্দেশ্য করে রণজিৎ রায় দুষ্টুমি করে বললেন "ভাবী আপনার হাতের চা খাওয়ানোর জন্য মনছুর ভাই আমাকে ধরে নিয়ে আসল "
"আসুন ভেতরে আসুন " সামনের রুমে তাদের বসিয়ে চা আনতে রান্নাঘরে চলে গেলেন রাবেয়া খাতুন।
"শুধু চা না আজরাতের খাবার এখানেই খাবেন। আপনার সাথে অনেক কথা আছে।"কথাটি বলেই জবাব শুনতে আগ্রহী না এমন ভাব নিয়ে পানি আনতে চলে গেলেন মনছুর মাষ্টার।
চায়ে চুমুক দিতে দিতে মনছুর মাষ্টার চিন্তা করতে লাগলেন " কিভাবে গ্রামের মানুষগুলোকে মানবতার সংজ্ঞা বুঝানো যায়! কিভাবে সবাইকে বুঝাবেন যে সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপর নাই! "
"কি ভাবছেন মনছুর ভাই! " রণজিৎ রায়ের প্রশ্ন শুনে ভাবনার সাগর থেকে বেরিয়ে এলেন মনছুর মাষ্টার।
"ও তেমন কিছু না" উত্তর দিয়ে চায়ের কাপে মনোযোগী হলেন মনছুর মাষ্টার।
" একটা ব্যাপার কি জানেন! এই সমস্যাটা শুধু আপনাদের ধর্মে না। আপনাদের ধর্মে যেমন হিন্দু বিদ্ধেষী রয়েছে ঠিক তেমনি আমাদের ধর্মেও মুসলিম বিদ্ধেষী রয়েছে। " কথাটি শেষ করতে পারলেন না রণজিৎ রায়।
মনছুর মাষ্টার তাড়াহুড়া করে বললেন " দাদা এসবের কোন সমাধান নেই? "
হুম থাকবে না কেন! একদিন বসে আলোচনা করব। আজকের মত আসি। আপনার বৌদি অপেক্ষায় আছে।
চলবে............................................
বিষয়: বিবিধ
১০৯৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন